কীভাবে সার্চ ইঞ্জিন র‍্যাংক নির্ধারণ করে?

কিভাবে সার্চ ইঞ্জিন র‍্যাংক নির্ধারণ করে?

সার্চ ইঞ্জিনগুলোকে প্রতিনিয়ত র‍্যাংক নির্ধারণের চ্যালেঞ্জে পড়তে হয়। গড়ে প্রতি মিনিটে ১৭৫টি নতুন ওয়েবসাইট ক্রিয়েট করা হয়। এই সকল ওয়েবসাইটে প্রতিদিন নতুন নতুন ইনফরমেশন সংযুক্ত হচ্ছে। এত সকল ওয়েবসাইট, ওয়েবপেইজ-এর মধ্য থেকে সঠিক পেইজ নির্বাচন করে সার্চ-এর উপযুক্ত সমাধান বের করা খুব সহজ নয় নিশ্চই।

ইন্টারনেট দুনিয়ায় প্রায় ৯০ শতাংশেরও বেশি সার্চ গুগল-এ হয় বিধায় সবার প্রধান আকর্ষণ গুগল। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বলতে সাধারণভাবে গুগল-এর জন্য অপটিমাইজেশন’কে নির্দেশ করে। তাই আমাদের আজকের আলোচনায় সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে গুগল প্রাধান্য পাবে। সার্চ ইঞ্জিন র‍্যাংকিং বলতে বোঝায় ইউজারের করা সার্চের বিপরীতে সবচেয়ে যোগ্য উত্তর খুঁজে বের করে গুগলের পেইজগুলো সাজানোর প্রক্রিয়াকে। গুগল এই ধরণের সার্চ রেজাল্ট নির্ধারণ করার জন্য তাদের নিজস্ব অ্যালগরিদম ব্যবহার করে। 

সময়ে সময়ে গুগল তাদের অ্যালগরিদম পরিবর্তন করে যেন আরও ভালো সার্চ রেজাল্ট সবার সামনে উপস্থাপন করতে পারে। অ্যালগরিদমে পরিবর্তন কিছু হয় ছোট আকারে আবার কিছু পরিবর্তন হয় বড় আকারে যেগুলোকে ব্রড/কোর আপডেট বলে থাকে। মজের এই লিংক-এ গেলে গুগল অ্যালগরিদম-এর সর্বশেষ পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাদের এই লিস্টে ২০০০ সালের পরবর্তীসময়ের যত আপডেট এসেছে সব আপডেটের লিস্ট করা আছে। 

গুগল কেন এত দ্রুত অ্যালগরিদম পরিবর্তন করে?

গুগল আসলে সরাসরি কিছু জানায় না কেন তারা ছোট-বড় পরিবর্তনগুলো নিয়ে আসে। তবে সবাই এই ব্যাপারে ধারণা করে যে- সার্চ রেজাল্টকে আরও বেশি রিলিভেন্ট করে তোলার উদ্দ্যেশে তাদের এত আয়োজন। আসলে গুগলের কিছু গাইডলাইন আছে যেখান থেকে আপনি জানতে পারবেন আদতে গুগল কন্টেন্ট  ক্রিয়েটরদের থেকে কী আশা করে। আরও জানতে গুগলের এই গাইডলাইনটিও পড়ে নিতে পারেন। 

সার্চ ইঞ্জিন কী চায়?

সার্চ ইঞ্জিনগুলো বরাবরের মতোই বলে আসছে ‘যারা ইউজারের করা প্রশ্নের বিপরীতে সবচেয়ে ভালো কন্টেন্ট দিতে পারবে তাদেরকে সার্চ ইঞ্জিনগুলো র‍্যাংক দেবে’। কিন্তু সত্যিই কি তা-ই? শুধু ভালো কন্টেন্ট দিলেই কি সবাই র‍্যাংক পেয়ে যায়? একটা সময় ছিল গুগল ভালোভাবে ইংরেজি কন্টেন্ট পড়ে বুঝতে পারত না। তখন সবাই গুগলকে অনেক ভাবে ট্রিক করে ‘কি-ওয়ার্ড স্টাফিং’ করে র‍্যাংক করে ফেলত। 

কি-ওয়ার্ড স্টাফিং কী?

ফোকাস কি-ওয়ার্ডকে বারবার মেনশন করে লেখাকে বোরিং করে ফেলার ব্যাপারটিকে কি-ওয়ার্ড স্টাফিং বলে। ধরুন গুগল একজন নতুন ভাষা শিক্ষার্থী। একজন নতুন ভাষা শিক্ষার্থীকে যেমন ঐ ভাষার লিটারেচারের গভীরত্ব অনুধাবন করানো সম্ভব হয়না, তেমনি গুগলও সেই সময় ভাষার মারপ্যাঁচ বুঝে উঠতে পারত না। হামিংবার্ড, পেঙ্গুয়িন-এর মতো আপডেট আসার পরে গুগলের অ্যালগরিদম আরও জটিল বিষয় বুঝতে পারছিল। তখন গুগল বুঝে গেল কারা কি-ওয়ার্ড স্টাফিং করছে আর কারা লিগ্যালি ভালো কন্টেন্ট প্রোভাইড করছে। 

এরপর বিভিন্ন সময় আপডেটের মাধ্যমে গুগল তাদের ইউজারদের জন্য সবচেয়ে ভাল রেজাল্ট বের করে আনত। এখনও যত রকম নতুন কোর আপডেট হয়, সব এসবের জন্য। গুগল নতুন কোনো ফাঁকফোকর পেলে সেগুলো নতুন আপডেটের মাধ্যমে ফিক্স করে দেয়। 

অনেক সময় যারা চালাকি করে তারা কোর আপডেটের পর ধরা খেয়ে যায়। র‍্যাংক হারিয়ে ফেলে। আবার অনেকে র‍্যাংক-এ সামনের দিকে অগ্রসর হয়। এই সামনের দিকে কারা অগ্রসর হয়, তা নিশ্চই বোঝার বাকি নেই। সার্চ ইঞ্জিন-এ র‍্যাংক করার ক্ষেত্রে ব্যাকলিংক-এর ভূমিকাও অনেক। এখনও পর্যন্ত ব্যাকলিংক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টরগুলোর একটি।

র‍্যাংকিং-এ ব্যাকলিংক-এর ভূমিকা

ব্যাকলিংক দুই ধরনের হতে পারে। যেমন-

  • ইনবাউন্ড ব্যাকলিংক: যা অন্য আরেকটি সাইট থেকে থেকে ব্যাকলিংক দেয় আপনার সাইটে।
  • ইন্টার্নাল লিংকিং: নিজের সাইটে নিজে ব্যাকলিং করাকে বলা হয় ইন্টার্নাল ব্যাকলিংক। 

ব্যাকলিংক-কে বিবেচনা করা হয় WoW (Word-of-Mouth)। অর্থাৎ আপনাকে নিয়ে অন্যরা কী বলছে সেটির ওপর ভিত্তি করে গুগল র‍্যাংক করে থাকে। এই ওয়ার্ড অভ মাউথ কত রকম হতে পারে দেখে নেয়া যাক-

Referrals from others: এটি সবসময় ভালো। যেমন অন্যরা আপনার সম্পর্কে যদি ভালো কথা বলে তা অবশ্যই কোনো না কোনো বিষয়ে আলোচনার যোগ্য। তেমনি ওয়েবসাইটেও অন্য সাইট থেকে রেফার পাওয়াকে গুগল ভালো চোখে দেখে।

Referrals from yourself: এটা কিছুটা বায়াসড মনে হয়। নিজেকে নিয়ে নিজে বলা গুগল এত পছন্দ করেনা। তবে এক্ষেত্রে ইন্টার্নাল লিংকিং-এর ব্যপারটি আলাদা। নিজের অন্যান্য সাইট থেকে লিংক করা একই হোস্টিং-এর আন্ডারে রেখে। এটাকে নির্দেশ করে। 

এই ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য গুগল পেইজর‍্যাংক নামে আরেকটি কোর আপডেট নিয়ে এসেছিল। যা গুগলের ফাউন্ডার ল্যারি পেইজের নামানুসারেই নামকরণ করা হয়। এখানে একটা বিষয় জানা দরকার, আপনার কন্টেন্ট নিয়ে মানুষ তখনই কথা বলবে যখন আপনার কন্টেন্ট ভালো হয়। আর ভালো হলে তারা ন্যাচারালি আপনাকে রেফার করবে। গুগল ন্যাচারাল লিংকিং-এর মাধ্যমে এমন একটি আবহ তৈরি করতে চেয়েছে।

র‍্যাংক-এর ক্ষেত্রে কন্টেন্ট-এর ভূমিকা

গুগল হচ্ছে একপ্রকার আন্সার মেশিন। এই আন্সারগুলো ভালোভাবে দিতে পারে একমাত্র কন্টেন্ট। হতে পারে সেটি ইমেইজ, ভিডিও, কিংবা আর্টিকেল। অনেক সময় এমনও দেখা গিয়েছে, কন্টেন্ট ভালো হলে কোন রকম ব্যাকলিংক ছাড়াই পোস্ট র‍্যাংক করে বসে থাকে। 

গুগল এতগুলো পেইজের মধ্যে কাকে রেখে কাকে র‍্যাংক দেবে? হ্যাঁ, এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো উত্তর হচ্ছে সার্চ ইন্টেন্ড যে ভালোভাবে পূরণ করবে তাকেই গুগল র‍্যাংক দেবে। বর্তমান সময়ে যদি সবচেয়ে স্ট্রং র‍্যাংকিং ফ্যাক্টরগুলো জানতে চাওয়া হয় তাহলে নাম আসবে-ব্যাকলিংকস, অন-পেইজ কন্টেন্ট, এবং র‍্যাংকব্রেইন। 

র‍্যাংকব্রেইন কী?

র‍্যাংকব্রেইন হচ্ছে একপ্রকার মেশিন লার্নিং যা গুগল কোর অ্যালগরিদম-এর একটি কম্পোনেন্ট। এটি এমন একটি র‍্যাংকিং ফ্যাক্টর যা সময়ে সময়ে কম্পেয়ার করে কার আগে র‍্যাংকে থাকা উচিত আর কার থাকা উচিত না। হ্যাঁ, এটিরও ভুল হতে পারে। বাট সময়ের সাথে ভুল শুধরে নতুন কোর আপডেটের মাধ্যমে অনলাইনকে জঞ্জালমুক্ত রাখছে গুগল। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো গুগলের ভেতরের লোকজন ছাড়া বাইরের কেউই জানেনা, কীভাবে এই র‍্যাংকব্রেইন কাজ করে। 

তাহলে গুগল কীভাবে এটি নির্ণয় করে?

র‍্যাংকব্রেইনের কার্যক্রম অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করতে পারে। যেহেতু র‍্যাংক ব্রেইনের কাজ সবচেয়ে যোগ্য কন্টেন্টকে সবার সামনে উপস্থাপন করা, সেহেতু র‍্যাংকব্রেইন এক্ষেত্রে যা যা বিবেচনায় আনতে পারে তা হলো-

  • ক্লিক: কতজন সার্চ রেজাল্ট পেইজ থেকে ক্লিক করছে 
  • পেইজে অবস্থান: ভিজিটর কতক্ষন পেইজে অবস্থান করছে
  • বাউন্স রেইট:  কন্টেন্ট-এর কতটুকু অংশ স্ক্রল করে বেরিয়ে গিয়েছে
  • পোগো-স্টিকিং:  একটা অর্গানিক রেজাল্টে ক্লিক করার পর কত দ্রুত সে আবার সার্চ রেজাল্ট পেইজে গিয়ে নতুন আরেকটি রেজাল্টে ক্লিক করে

লোকাল সার্চ

গুগলের এটি একটি চমৎকার ফিচার। লোকাল সার্চ গুগলের সার্ভিসকে আরও অনেক জনপ্রিয় করে তুলেছে। এই লোকাল সার্চগুলো নির্ভর করে রিলিভ্যান্সি, ডিসট্যান্স এবং প্রোমিন্যান্স-এর উপর। এছাড়াও রিভিউ এবং সাইটেশনের মাধ্যমে গুগল এই লোকাল সার্চগুলো নির্ধারণ করে থাকে। যেমন কেউ যদি গুগলে রেস্টুরেন্ট’ লিখে সার্চ করে, তাহলে ইউজার যে লোকেশন থেকে সার্চ করেছে  তার ডেটার ওপর ভিত্তিকরে ইউজারের কাছাকাছি অবস্থানরত রেস্টুরেন্টগুলোই সার্চ রেজাল্টে দেখায়।

Tech Vergebd

Share

1 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Default