September 4, 2021
সরকার ফোন বিক্রি থেকে প্রচুর পরিমান রাজস্ব হারানোর কারণে দেশে থাকা অবৈধ বা আন-অফিশিয়াল ফোন বন্ধ করার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। জানা যায় আগামীতে আন-অফিশিয়াল ফোনগুলো কোন ধরণের দেশি মোবাইল অপারেটর নেটওয়ার্ক এর সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবে না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে- আপনি কীভাবে বুঝবেন আপনার ফোন অফিশিয়াল নাকি আন-অফিশিয়াল? তার আগে জেনে নেয়া যাক অফিশিয়াল/আন-অফিশিয়াল ফোন বলতে কী বোঝায়!
একটি ফোন ম্যানুফেকচারিং দেশ থেকে নিয়ে এসে অন্য দেশে বিক্রি করতে হলে, যে দেশে বিক্রি করা হবে সে দেশের সরকারের কাছ থেকে সেই ফোন বিক্রির অনুমোদন নিতে হয়। যাতে করে সরকার প্রতিটি ফোনের বিক্রির জন্য ট্যাক্স নিতে পারে।
যারা এই নিয়ম মেনে সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে ফোন বিক্রি করে সেই ফোনগুলোকে বলা হয় অফিশিয়াল ফোন। অর্থাৎ যে সকল ফোন থেকে সরকার ট্যাক্স পেয়েছে সেই ফোন গুলো বৈধভাবে বিক্রির জন্য উপযুক্ত।
অবৈধ ভাবে বা সরকারকে ট্যাক্স না দিয়ে যে সকল ফোন বিক্রি করা হয়, সে সব ফোনকে আন-অফিশিয়াল ফোন বলা হয়ে থাকে। এই আন-অফিশিয়াল ফোনগুলোতে কোন প্রকার ওয়ারেন্টি থাকেনা। শুধু দাম কম হওয়ায় এবং ফোন দেশে অফিশিয়াল ভাবে লঞ্চ হওয়ার আগে হাতে পাওয়ায় এই ফোনগুলো ইউজাররা কিনে থাকেন।
IMEI(International Mobile Equipment Identity) হচ্ছে একপ্রকার ইউনিক নাম্বার যা GSM, WCDMA, এবং iDEN মোবাইল ফোন গুলো শনাক্তে ব্যবহৃত হয়। এগুলো ছাড়াও কিছু কিছু স্যাটেলাইট ফোন আছে যেগুলো চিহ্নিত করতে এই আইএমইআই নাম্বার ব্যবহার করা হয়।
IMEI নাম্বার প্রতিটি ফোনে আলাদা আলাদা করে দেয়া থাকে। কোন ফোন হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে উদ্ধার করতে এই নাম্বার অনেক সাহায্য করে।
আপনার ফোনের IMEI জানতে হলে ডায়াল করতে হবে *#০৬#। এছাড়াও আপনার ফোনের বক্সের ওপর IMEI নাম্বার পেয়ে যাবেন। আইফোন সহ আরও অনেক ডিভাইসের পেছনের অংশে ছোট করে IMEI নাম্বার লেখা থাকে।
আপনার ফোনটি অফিশিয়াল হলে সরকারের এনইআইআর ডেটাবেইজে আপনার ফোনের IMEI থাকবে। এখন আপনাকে শুধু নিশ্চিত হতে হবে, আপনার ফোনের IMEI নাম্বার এনইআইআর ডেটাবেইজে আছে কিনা।
আপনি এই কাজটি দুইভাবে করতে পারেন।
আপনার ফোনটি সরকারি ডেটাবেইজে আছে কিনা জানার জন্য আপনাকে একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠাতে হবে। এই ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর নিয়ম হচ্ছে- “KYD আপনার ফোনের IMEI নাম্বার” লেখে পাঠাতে হবে ১৬০০২ এই নাম্বারে। যেমন-
KYD 8456332464343
প্রথমে আপনাকে এই ওয়েবসাইটে যেতে হবে। তারপর এখান থেকে নতুন একটি অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করতে হবে। ওটিপি ভেরিফিকেশন শেষে আপনি নিজের একটি ড্যাশবোর্ড দেখতে পাবেন। সেখানে হ্যান্ডসেটের IMEI স্ট্যাটাস নামক অপশন পাবেন। আপনার ফোনের IMEI নাম্বারটি এখানে দিলে আপনি জানতে পারবেন ফোনটি ডেটাবেইজে আছে কিনা।
আপনার ফোন যদি অফিশিয়াল ফোন হয়ে থাকে তাহলে নিচের ছবির মেসেজের মতো একটি টেক্সট পাবেন। আর যদি ফোন আন-অফিশিয়াল হয়ে থাকে তাহলে বলবে বিটিআরসি’র ডেটাবেইজে আপনার ফোনের IMEI পাওয়া যায়নি।
বিটিআরসি’র ডেটাবেইজে যদি আপনার ফোনের IMEI নাম্বার না পাওয়া যায় তাহলে বুঝে নিতে হবে আপনার ফোন আন-অফিশিয়াল। অর্থাৎ আপনার ফোন থেকে সরকার কোন প্রকার ট্যাক্স পায়নি। এখনও পর্যন্ত সরকার ঘোষণা দিচ্ছে যাদের ফোন আন-অফিশিয়াল তাদের ফোনে মোবাইল অপারেটরদের নেটওয়ার্ক-এর সাথে সংযুক্ত হতে পারবে না। ফলে আপনি মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে করা যায় এমন কাজগুলো করতে পারবেন না।
অফিশিয়াল ফোন গুলোর মধ্যে বেশ কিছু ফিচার রয়েছে যা আন-অফিশিয়াল ফোনে নেই। যেমন-
তবে অফিশিয়াল ফোনের দাম আন-অফিশিয়াল ফোন থেকে কিছুটা বেশি। তাই অনেক ব্যবহারকারী অফিশিয়াল ফোন নিতে চায় না।
আপনি যদি একজন সচেতন নাগরিক হয়ে থাকেন তাহলে আপনার কখনও একটি আন-অফিশিয়াল ফোন কেনা উচিত নয়। কারণ-
বিটিআরসি ২০১২ সাল থেকে অবৈধ স্মার্টফোন বন্ধ করার উদ্যোগ নিলেও কোন না কোন কারণে তা বাস্তবায়ন করা এতদিন পর্যন্ত সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে বিটিআরসি ইআইআর-এর মাধ্যমে সকল ফোনের IMEI নাম্বার ডেটাবেইজ করার উদ্দ্যেগ নেয়। নভেম্বর নাগাদ দরপত্রের মাধ্যমে সিনেসিস আইটিকে আন-অফিশিয়াল ফোন বন্ধের প্রযুক্তিগত সমাধান-এর জন্য অনুমোদন দেয়া হয়।