September 3, 2021
একবিংশ শতাব্দী অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের জীবনযাত্রাকে এত বেশি সহজ করে দিয়েছে যে এখন আর মানুষকে কাজ করার জন্য অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতে হয় না। কারণ এখন ঘরে বসে বেশিরভাগ অফিশিয়াল কাজ করা সম্ভব হয় রিমোট জব-এর মাধ্যমে। যদিও বহির্বিশ্বে ‘রিমোট জব’ শব্দটির সাথে অনেকের আগে থেকে পরিচয় রয়েছে, কিন্তু আমাদের দেশে ‘রিমোট জব’ শব্দটি অনেকের কাছে নতুন।
এই দেশে ‘রিমোট জব’ শব্দটি নতুন বলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কারণ এখানে অ্যাভেলেবল ইন্টারনেট নেই। সেই সাথে ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক-এর অবস্থা যাচ্ছেতাই। এখনো প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঠিকমত থ্রিজি নেটওয়ার্কের দেখা মেলে না।
কিন্তু এতসব বাধা সত্ত্বেও কিছু কিছু বাংলাদেশি তরুণ রিমোট জব শব্দটির সাথে নিজেদের পরিচয় ঘটাচ্ছে, এবং একই সাথে এর সর্বোচ্চ সুবিধা গ্রহন করা শুরু করেছে। এই তরুণদেরকে আমরা চিনি ফ্রিল্যান্সার নামে। এই তরুণেরা যে প্লাটফর্ম ব্যবহার করে রিমোট জব করে, সেই প্লাটফর্মকে বলা হয় মার্কেটপ্লেস।
আজকে আমরা জানব মার্কেটপ্লেস কী এবং বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেসগুলো সম্পর্কে। চলুন শুরু করা যাক।
ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস-এর মাধ্যমে অনলাইনে যাবতীয় কাজ করানো এবং করা যায়। এটি একপ্রকার বাজারের মতো মিলনমেলা। যেখানে ক্লায়েন্টরা থাকবে ফ্রিল্যান্সার খুঁজতে, আর ফ্রিল্যান্সাররা থাকবে কাজ খুঁজতে। উভয় পক্ষের মিলনস্থল হলো এই মার্কেটপ্লেস।
মার্কেটপ্লেসগুলো কিছু কমিশন নিয়ে থাকে কাজ আদান-প্রদান সম্পন্ন হলে বা কাজের জন্য অর্ডার করতে গেলে। কারণ তারা মার্কেটিং থেকে শুরু করে তাদের নিজস্ব লোকবল দিয়ে সবার জন্য একটি মিলনমেলার তৈরি করে। এক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সার, মার্কেটপ্লেস ওনার, এবং ক্লায়েন্ট সবার উপকার হয়।
প্রায় ৯০ এর অধিক ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস রয়েছে সারাবিশ্বে। এছাড়াও লোকাল অনেক রকম মার্কেটপ্লেস আছে যেগুলোর পরিচিতি খুব একটা নেই। মার্কেটপ্লেস জনপ্রিয় করতে হলে ক্লায়েন্ট এবং ফ্রিল্যান্সার উভয়ের সমন্বয় থাকতে হয়। একপক্ষ বেশি হয়ে গেলে মার্কেটে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়।
এই ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসগুলোর জনপ্রিয়তা ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন রকম। আবার সবগুলো একই উদ্দ্যেশেও তৈরি নয়। এর মাঝে কিছু আছে নির্দিষ্ট কাজের জন্য তৈরি হয়েছে। আবার কিছু মার্কেটপ্লেস রয়েছে মোটামুটি সব ধরণের কাজ করা যায় এমন মার্কেটপ্লেস।
আজকে আমরা কথা বলব বাংলাদেশে জনপ্রিয় কিছু ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে।
বাংলাদেশের অনেকে অনেক ধরণের ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইট ব্যবহার করে থাকেন। তার মধ্যে সবাই যে সাইটগুলো বেশি ব্যবহার করে তাই আজকে তুলে ধরবো।
ফাইভার একটি জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস, যা মূলত প্রস্তুত করা হয়েছিল বায়ারদের সর্বোচ্চ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে। ফাইবারের তুলনায় অন্যান্য মার্কেটপ্লেসগুলোতে কোন সার্ভিস ক্রয় করা কিছুটা কঠিন। তবে এখন অনেক মার্কেটপ্লেস ফাইভারের মত গিগভিত্তিক (Gig) সার্ভিস দেওয়া শুরু করছে। যেমন আপওয়ার্ক। তাদের আগে গিগভিত্তিক সার্ভিস প্রদানের উপায় ছিল না। এখন তারা প্রজেক্ট ক্যাটালগ নামক সিস্টেম তৈরি করে ফাইভারের ন্যায় গিগভিত্তিক সহজ সার্ভিসগুলো দিতে পারছে।
ফাইভারে রয়েছে ৩.২ মিলিয়ন অ্যাক্টিভ বায়ার, এবং ৮০ মিলিয়ন ফ্রিল্যান্সার। যা ফাইভারকে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেসে পরিণত করেছে। এছাড়াও এখানে কোন সার্ভিস প্রদান করা অত্যন্ত সহজ। বায়ারের পক্ষেও সার্ভিস কেনা সহজ, সেলারের পক্ষেও সার্ভিস বিক্রি করা সহজ। এটি ফাইভারকে অন্যান্য মার্কেটপ্লেস থেকে অনন্য করে তুলেছে।
আপওয়ার্ক-এর পূর্বের নাম ছিল ওডেক্স। আপওয়ার্ক ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসের বেশ স্বনামধন্য একটি মার্কেটপ্লেস। এখানে স্ক্যাম-এর সংখ্যা একেবারেই কম। আপওয়ার্ক অনেক স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে এই মার্কেটপ্লেসটির ডিজাইন করেছে। এখানে দুই ভাবে কাজ করা যায়। আওয়ারলি রেইট, কিংবা ফিক্সড প্রাইস। এবং ইন্টারন্যাশানাল ওয়ার্কিং আওয়ার মেনটেইন করার সিস্টেম রয়েছে।
আপওয়ার্কের সবকিছু অত্যন্ত পেশাদার পর্যায়ের। এই মার্কেটপ্লেস মূলত যারা একটু দক্ষ হয়ে ওঠেন তাদের জন্য। নতুনদের এই মার্কেটপ্লেসে না আসার অনুরোধ করেন অনেকে। এখানকার বায়ারগুলো অনেক ডিসেন্ট। এখানে আজেবাজে জব পোস্টিং হয়না। সিরিয়াস কাজের জন্য সবাই আপওয়ার্ক-কে পছন্দ করে।
ফ্রিল্যান্সার ডট কম একটি অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক অনলাইন ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস। যাদের প্রায় ১৭০ মিলিয়ন রেজিস্টার্ড ইউজার রয়েছে। এই মার্কেটপ্লেসটি বিশ্বের প্রায় ২৪০+ দেশে ফ্রিল্যান্সিং সুবিধা দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশেও এই মার্কেটপ্লেসের জনপ্রিয়তা অনেক। এখানেও আপওয়ার্কের মত আওয়ারলি রেইট, এবং ফিক্সড প্রাইসে কাজ করা যায়।
এই মার্কেটপ্লেসের আরেকটি জনপ্রিয় ফিচার হলো এখানে প্রতিটি সেগমেন্টে বিভিন্ন রকম কন্টেস্ট হয়ে থাকে। একজন নবীন ফ্রিল্যান্সারকে কারও নজরে আসতে হলে এর থেকে আর ভালো কোন উপায় নেই। অর্থাত যেকেউ চাইলে কন্টেস্টে অংশগ্রহণ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে পারে।
পিপল পার আওয়ার যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস। বর্তমানে গড়ে ১.১ মিলিয়ন জব পোস্ট থাকে পিপল পার আওয়ার-এ। এছাড়া এদের রয়েছে ১.৫ মিলিয়ন ইউজার। তাদের এখন পর্যন্ত কার্যক্রম রয়েছে পৃথিবীর প্রায় ৮৯টি দেশে।
বাংলাদেশেও এই মার্কেটপ্লেসের অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে। অন্যান্য মার্কেটপ্লেসের তুলনায় কম্পিটিশন কম হওয়ার কারণে অনেকে এই ধরণের মার্কেটপ্লেসে কাজ করে থাকেন।
গুরু নামটি শুনতে অনেকটা ইন্ডিয়ান মার্কেটপ্লেস মনে হলেও আদতে এটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ১৯৯৮ সালে। গুরু’র সবচেয়ে ইউনিক বিষয় হচ্ছে তারা দাবি করে তাদের প্লাটফর্মে ৩.৪ মিলিয়নের অধিক ইউনিক সার্ভিস রয়েছে। এমন কিছু অসাধারণ সার্ভিস রয়েছে যা বায়ারদের অবাক করেই ছাড়ে।
বাংলাদেশেও এই মার্কেটপ্লেসের বেশ সুনাম রয়েছে। অনেক ফ্রিল্যান্সার এই মার্কেটপ্লেসটি ব্যবহার করে থাকেন।
এই কয়েকটি ছাড়াও বাংলাদেশে ব্যবহৃত হয় এমন আরও অসংখ্য ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস রয়েছে। অনেকে কাজের ধরণ অনুযায়ী স্পেসিফিক কিছু ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস ব্যবহার করে থাকেন। যেমন এসইওক্লার্ক, ৯৯ডিজাইন, ফোল্যিও ইত্যাদি।