February 7, 2021
লিংকডইন একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হলেও এটি কিন্তু ফেইসবুক, বা টুইটারের মতো কিছু নয়। বরং এটি ব্যবহার করা হয় পেশাগত উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। চাকুরী খোঁজা, আগ্রহের বিষয়ের সাথে জড়িত অন্যান্য মানুষদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, বিভিন্ন কোম্পানির আপডেট রাখা; মূলত এসব কাজেই লিংকডইন-এর ব্যবহার বেশি।
সচরাচর চাকুরী খোঁজার প্লাটফর্ম হিসেবে এটিকে বিবেচনা করা হলেও, লিংকডইন ব্যবহার করে আপনি আপনার স্কিলসমূহ অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারেন, নিজের ইন্ডাস্ট্রির মানুষদের সাথে পরিচিত হতে পারেন, বিশাল একটি পেশাদার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারেন। যারা কর্মজীবী, বা শিক্ষার্থী, অথবা নতুন কোনো কাজের সন্ধানে আছেন, তারাই মূলত লিংকডইনকে সিরিয়াসলি ব্যবহার করেন।
লিংকডইন ব্যবহার করে অনেক কোম্পানি নতুন কর্মী নিযুক্ত করেন। বিশ্বের ২০০টি দেশের মানুষ এ প্লাটফর্মটি ব্যবহার করেন। ২০২০ সালের শেষদিকের হিসেব অনুযায়ী প্রায় ৭০০ মিলিয়নের বেশি মানুষ লিংকডইন ব্যবহার করেন। ফরচুন-এর তালিকার ৫০০ কোম্পানির সবগুলোর নির্বাহী কর্মকর্তারা লিংকডইন ব্যবহার করেন। সুতরাং, বুঝতেই পারছেন, কর্মক্ষেত্রে লিংকডইন কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
তাহলে আর বসে থাকা কেন? যদি আপনি ইতোমধ্যে লিংকডইন ব্যবহার না করে থাকেন, তাহলে আজই একটি অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলুন। আর আগে থেকে ব্যবহার করলে তো কথাই নেই। আজকের লেখায় আপনাদের জানানো হবে লিংকডইন যথাযথ ব্যবহারের টিপস।
লিংকডইন-এর অ্যাকাউন্ট দুধরণের। বেসিক, ও প্রিমিয়াম। প্রাথমিকভাবে আপনি ফ্রি, অর্থাৎ বেসিক ভার্সনটি ব্যবহার করতে পারেন। লিংকডইন হচ্ছে আপনান নিজস্ব বিলবোর্ড। এখানে আপনি কোম্পানিগুলোকে প্রদর্শন করবেন আপনার কী কী দক্ষতা আছে, কী কাজ করতে ইচ্ছুক, কোন বিষয়ে আগ্রহ আছে, আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি। সুতরাং, হেলাফেলা করে লিংকডইন ব্যবহার করার মানেই হয় না।
আপনার লিংকডইন-এর প্রোফাইল পিকচারটি হওয়া চাই সুন্দর, ও পেশাদার। কারণ, ফার্স্ট ইম্প্রেশন বলে একটা কথা আছে। আপনার প্রোফাইল দেখেই অনেক কোম্পানি আপনাকে জাজ করবে। আর প্রোফাইলের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো প্রোফাইল ফটো। সুতরাং, এটি যত স্মার্ট, পেশাদার হবে, ততই উত্তম। মার্জিত পোষাক পরে ছবি তোলা উচিত।
ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে যেন অস্বাভাবিক কিছু না থাকে। পোট্রের্ট সাইজের ছবি হলেই ভালো। যথেষ্ট আলো থাকতে হবে। চেহারায় রাখুন আত্মবিশ্বাসের ছাপ। চাইলে পেশাদার ফটোগ্রাফার দিয়েই ছবিটি তোলাতে পারেন। এমন কোনো ক্যাজুয়াল ছবি ব্যবহার করবেন না, যাতে আপনার সম্পর্কে অডিয়েন্স অপ্রীতিকর, অপ্রয়োজনীয় কোনো ধারণা পোষণ করেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের একদম ওপরের দিকে আর সব সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্মের মতোই ব্যাকগ্রাউন্ড তথা কাভার ফটো ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রেও পরিচ্ছন্ন ছবি ব্যবহার করুন।
ফেইসবুকের বায়ো’র মতো অনেকটা, নির্দিষ্ট শব্দের ভেতর লিখতে হয়। তবে এটিতে অবশ্যই ফেইসবুকের মতো কোনো সিনেমার সংলাপ, গানের কথা বসানো যাবে না। লিংকডইন সামারিতে আপনি নিজের সম্পর্কে লিখবেন। কোনো চাকুরির সাক্ষাৎকারে আপনার সম্পর্কে বলতে হলে যেরকম সিরিয়াসনেস নিয়ে বলবেন, ঠিক সেরকম স্মার্ট একটি সামারি লিখতে হয়।
এক্ষেত্রে আপনার আগ্রহের বিষয়, আগে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে তা, কোথায় পড়ালেখা করছেন, ভবিষ্যতে কী বিষয়ে আগ্রহ আছে, কী ধরণের কাজের সাথে যুক্ত হতে চান; এসব লিখবেন। বানানে একদমই ভুল করা যাবে না, বিরাম চিহ্নের সঠিক ব্যবহার করতে হবে।
লিংকডইন প্রোফাইল সামারির কিছু নিজস্ব শব্দ থাকে, যেগুলো প্রায় সবাই-ই ব্যবহার করে। যেমন, ‘specialised’, ‘leadership’, ‘focused’, ‘strategic’, ‘experienced’, ‘passionate’, ‘expert’, ‘creative’, ‘innovative’, and ‘certified’ ইত্যাদি। এ শব্দগুলোর প্রতিশব্দ ব্যবহার করার চেষ্টা করুন, যাতে বাকিসবার চেয়ে আপনার প্রোফাইল আলাদা দেখায়। তবে, তার মানে এই না যে, আপনি এগুলো একদমই ব্যবহার করতে পারবেন না, তবে যেসব বিশেষণ ব্যবহার করবেন, সেগুলো যেন অর্থপূর্ণ হয়।
লিংকডইন-এর একটি আলাদা সেকশন রয়েছে যেখানে আপনি আপনার দক্ষতাসমূহ (Skills) প্রদর্শন করতে পারেন। যেমন আপনি যদি একজন কনটেন্ট রাইটার হোন, তাহলে সেখানে তা যুক্ত করতে পারেন। এর ফলে কনটেন্ট রাইটার যারা খুঁজছে, তারা সহজে আপনার প্রোফাইল খঁজে পাবে।
কমপক্ষে পাঁচটি স্কিল যোগ করুন। কারণ, যাদের প্রোফাইলে পাঁচটি বা তার বেশি স্কিল যুক্ত থাকে, তারা এর চেয়ে কম থাকা মানুষদের চেয়ে ২৭ গুণ বেশি রিচ লাভ করেন। তবে ভুয়া স্কিল যুক্ত না করাই উচিত।
লিংকডইন-এ স্কিল যোগ করার পর আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়ার উপায় হচ্ছে এ টেস্ট। আপনার স্পেসিফিক টেস্টের ওপর লিংকডইন আপনার কাছ থেকে একটি কুইজ নেবে। যদি আপনি ওই কুইজে উতরে যান, তাহলে একটি ভেরিফাইড স্কিল ব্যাজ পাবেন। সুতরাং, মিথ্যা স্কিল যোগ করার কোনো মানেই হয় না। যারা এ ব্যাজটি তাদের স্কিল সেকশনে যোগ করতে পারেন, তাদের কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা ৩০ শতাংশর মতো বেড়ে যায়।
অ্যাকাউন্ট খোলার পর আপনি অন্যকে কানেকশন রিকোয়েস্ট পাঠাতে পারবেন। আপনার কর্মক্ষেত্রের সহকর্মী, সহপাঠী, একই পেশার অন্যান্যদের সাথে এভাবে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারেন। সাধারণত ১০০+ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারাটা ভালো, ধীরে ধীরে ৫০০ নেটওয়ার্ক অতিক্রম করার চেষ্টা করুণ। এক্ষেত্রে, সঠিক কানেকশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লিংকডইন-এ যার-তার সাথে যুক্ত না হওয়াই শ্রেয়। আপনার পেশা, আগ্রহ, পড়াশোনা ইত্যাদির সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষজনের সাথেই যুক্ত হোন।
ফেইসবুকে যেরকম নিজের প্রোফাইলের ইউআরএল (URL) পাল্টিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো দেওয়া যায় (Customization), ঠিক তেমনিভাবে লিংকডইন-এও আপনার প্রোফাইল ইউআরএল ইচ্ছে করলে পাল্টাতে পারেন। অ্যাকাউন্ট খোলার সময় এটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে তৈরি হয়, যেটি সাধারণত সংখ্যা, অক্ষর এসব দিয়ে তৈরি হয়। কিন্তু আপনি চাইলে ইউআরএল-এ নিজের নাম ব্যবহার করতে পারেন। এটি করা প্রয়োজনীয়, কারণ কাস্টমাইজড ইউআরএল আপনার প্রোফাইলের ও আপনার স্মার্টনেসের পরিচয় বহন করে।
লিংকডইন-এর একটি বড় সুবিধা হলো, আপনি এখানে সরাসরি কাজের খোঁজ করতে পারবেন। কোম্পানিগুলো বা কোম্পানির নির্বাহীরা এখানে জব পোস্ট করেন। আপনি ইচ্ছে করলে এ ধরনের পোস্টের নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য নোটিফিকেশন অন করে রাখতে পারেন। আপনার আগ্রহের বিষয়ানুযায়ী লিংকডইন-ই আপনাকে জব সাজেশন পাঠাবে।
কোম্পানিগুলোর প্রোফাইলে নিয়মিত নজর রাখুন জব আপডেটের জন্য। তবে লিংকডইন-এর আরেকটি চমৎকার ফিচার আপনি কাজ খোঁজার জন্য ব্যবহার করতে পারেন। ওপেন টু জব নামের এ ফিচারটি অ্যাক্টিভেট করলে আপনার প্রোফাইল, ও প্রোফাইল ছবিতে সেটি প্রদর্শন করবে। এর মানে হচ্ছে, আপনি এখন নতুন কোনো কাজে যোগ দিতে আগ্রহী।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে লিংকডইন ব্যবহার করা হয় নিজের আগ্রহের ক্ষেত্রকে বর্ধিত করার জন্য। তবে অন্য কোনো বিষয় নিয়ে কাজ করার মানসিকতাও রাখতে হবে। অর্থাৎ, জব শিফটিং-এর ব্যাপারেও লিংকডইন ব্যবহার করতে পারেন।
নিয়মিত আপডেট করুন আপনার প্রোফাইল। সময়ে সময়ে প্রোফাইল ছবিও পাল্টাতে পারেন। কোনো কাজ ছেড়ে দিলে তা আপনার ফিডে আপডেট করুন, যাতে অন্যরা দেখে বুঝতে পারে আপনি নতুন কাজের সন্ধানে আছেন। পড়াশোনায় কোনো পরিবর্তন এলে আপডেট করুন, কোনো ডিগ্রি বা কোর্স শেষ হলে তা যোগ করুন। কোনো নতুন অনলাইন কোর্স সার্টিফিকেট লিংকডইন-এ শেয়ার করতে পারেন। নতুন কোনো দক্ষতা অর্জন করলে স্কিল সেকশনে তা যুক্ত করুন।
লিংকডইন-এ নিয়মিত একটিভ থাকার উপায় হচ্ছে বিভিন্ন পেশাদার আর্টিকেল শেয়ার করা, অন্যের আপডেট বা পোস্টে লাইক বা কমেন্ট করা ইত্যাদি। এতে করে আপনার প্রোফাইলের ভিজিবিলিটি বাড়ে। তবে এসব করতে গিয়ে আবার অন্যের বিরক্তির কারণ হবেন না যেন।
তবে যা-ইচ্ছা-তাও শেয়ার করা যাবে না। আপনার টাইমলাইন পরিচ্ছন্ন ও পেশাদার রাখুন। এটা ফেইসবুক নয়, তাই এখানে চটুল হাস্যরস, আবেগ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে পোস্ট না করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
Featured Image: Alexander Shatov on Unsplash