January 28, 2021
আপনি যদি ই-স্পোর্টস দুনিয়ার খোঁজখবর রাখেন তাহলে ডক্টর ডিসরেসপেক্ট-কে আপনার চেনার কথা। বদমেজাজি, খামখেয়ালি এই স্ট্রিমারের রয়েছে বিশাল ফ্যানবেজ। প্রায় সময়ই বিতর্কের সৃষ্টি করেন ডক। শেষবার এই গেমার টুইটারে লিখেছিলেন, মোবাইল গেমিং কোনো সিরিয়াস বিষয় নয়। নিজের পিসির সেটআপ সম্পর্কে বর্ণনা করে তিনি বলেছিলেন:
আমার কাছে তিনটি স্টেট-অভ-দ্য-আর্ট ১এমএস স্পিড কালার ক্যালিব্রেটেড মনিটর রয়েছে, দুই লাখ ডলারের পিসি সেটআপ রয়েছে, তারপরও তোমাদের কলজে এত বড় যে তোমরা বলছো, মোবাইল গেমিং একটা সিরিয়াস বিষয়?
ডক ডিসরেসপেক্টের এ টুইটের পর তিনি যথেষ্ট সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলেন। পরে তাকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হয়েছিল, জানিয়েছিলেন আবেগের বশে এ কথাটা বলে ফেলেছিলেন তিনি।
আমাদের আলোচ্য বিষয় ডক্টর ডিসরেসপেক্ট বা ই-স্পোর্টস নয়। খেয়াল করে দেখবেন, ডক তার মনিটর সম্পর্কে বলেছেন, সেগুলো ছিল ১এমএস, অর্থাৎ ০১ মিলিসেকেন্ড স্পিড কালার ক্যালিব্রেটেড মনিটর। মনিটরের এ ক্ষমতাটি গেমিং-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এ ধরনের মনিটরে খেলার সময় কোনো ল্যাগ দেখা যায় না, খুব দ্রুতগতিতে কনটেন্ট লোড হয়। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেটও (display refresh rate) ঠিক কাছাকাছি একটি জিনিস। চলুন জেনে নেওয়া যাক স্মার্টফোনের ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট বলতে কী বোঝায়।
আমাদের স্মার্টফোনের ডিসপ্লে নিশ্চল কোনো বস্তু নয়, এটি প্রতিনিয়ত পাল্টাতে থাকে। অর্থাৎ আমরা যখন স্মার্টফোন ব্যবহার করি, তখন এর পর্দা সারাক্ষণই গতিশীল অবস্থায় থাকে। আর এ গতিশীলতা মাপার একককেই ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট বলে।
ডিসপ্লে যখন আপনার চোখের সামনে বারবার পরিবর্তিত হয় তখন একে একক সময়ের মধ্য নির্দিষ্ট পরিমাণ বার রিফ্রেশড হতে হয়। প্রতিটি নতুন স্ক্রিন দেখাতে গেলে এর পিক্সেলগুলোর আপডেটের প্রয়োজন পড়ে। অন্যভাবে বলতে গেলে, ব্যাপারটা অনেকটা ভিডিওর মতো। একটি ভিডিও যখন চালু করা হয়, তখর এটি মূলত খুব দ্রুতগতিতে অনেকগুলো স্টিল ছবি একের পর একে পাল্টাতে থাকে।
কাজটা এত দ্রুত হয় যে, তখন আমাদের চোখের সামনে ওই ধাবমান ছবিগুলো চলমান ভিডিও হিসেবে আবির্ভূত হয়। মোবাইলের ডিসপ্লেও আপনাকে এভাবে অনেকগুলো স্টিল ইমেজ দেখায়, আর এই দেখানোর কাজটা কত দ্রুত গতিতে সম্পাদিত হয় তার হিসেবটাই হচ্ছে ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট। একে হার্জ (Hertz) এককে মাপা হয়।
একদম এক বাক্যে বলতে গেলে, প্রতি এক সেকেন্ডে স্ক্রিনের প্রতি একক ইমেজ যতবার রিফ্রেশড হয়, তাকেই ওই স্ক্রিনের রিফ্রেশ রেট বলে।
উদাহরণস্বরূপ, ১২০ হার্জ ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট বলতে বোঝায় ওই ডিসপ্লেটি প্রতি সেকেন্ডে ১২০ বার রিফ্রেশড হয়।
সাধারণত তিন ধরণের রিফ্রেশ রেট প্রচলিত আছে। এগুলো হচ্ছে ৬০ হার্জ (60Hz), ৯০ হার্জ (90Hz), ও ১২০ (120Hz)।
৬০ হার্জ ডিসপ্লে প্রতি সেকেন্ডে ৬০ বার, ৯০ হার্জ প্রতি সেকেন্ডে ৯০ বার, এবং ১২০ হার্জ ডিসপ্লে প্রতি সেকেন্ডে ১২০ বার রিফ্রেশড হয়।
যত দ্রুত বা বেশিবার ডিসপ্লে আপডেটেড বা রিফ্রেশড হয়, মোবাইলের স্ক্রিনও দর্শকের চোখে তত বেশি স্মুদ দেখায়। কিন্তু তা-ই বলে যে ১২০ হার্জের ডিসপ্লে সব কাজের জন্য ভালো হবে ব্যাপারটা তাও কিন্তু নয়। এ সম্পর্কে আর্টিকেলের পরের অংশে আলোচনা করা হবে।
আগেই বলেছি, যত বেশি রিফ্রেশ রেট, তত বেশি স্মুদ ডিসপ্লে। আপনি ৬০ হার্জ ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট ফোন ব্যবহার করার পর ৯০ হার্জ বা ১২০ হার্জ ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেটের ফোন ব্যবহার করলে এ পরিবর্তনটুকু দেখতে ও উপভোগ করতে পারবেন।
আর তাই তো আজকালকার হাই-এন্ড স্মার্টফোনগুলোর উচ্চ রিফ্রেশ রেটকে খুব ঢাকঢোল বাজিয়ে মার্কেটিং করা হয়। এ সময়কার স্মার্টফোনের প্রতিযোগিতামূলক ফিচারগুলোর একটি হচ্ছে এই স্ক্রিন রিফ্রেশ রেট।
আপনি যদি একজন গেমার হন, তাহলে যত বেশি রিফ্রেশ রেট হবে, ততই আপনার জন্য ভালো হবে। ১২০ হার্জের ডিসপ্লে আপনাকে ১২০ ফ্রেম-পার-সেকেন্ড পর্যন্ত সরবরাহ করতে পারবে। ১২০ হার্জ ডিসপ্লে যতদ্রুত আপনার চোখের সামনে পাল্টাতে থাকবে, ৬০ হার্জ আরেকটু বেশি সময় নেবে। এতে করে গেমিং-এর সর্বোচ্চ ইউজার এক্সপেরিয়েন্স নাও পেতে পারেন।
কিন্তু অন্য সব সাধারণ কাজ, যেমন ফেইসবুক স্ক্রলিং বা নিউজ পড়া, নোটপ্যাডে লেখা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ৬০ হার্জ বা ১২০ হার্জ তেমন কোনো পার্থক্য তৈরি করে না। ৬০ হার্জ ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেটে আপনি ফেইসবুক, টুইটার, বা ইমেইলের ইউজার ইন্টারফেসকে যেরকম দেখবেন, ১২০ হার্জ ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেটের ক্ষেত্রেও তা একই দেখাবে।
তবে যেসব অ্যাপ্লিকেশনে বেশি পরিমাণ গ্রাফিকাল মোশন থাকে, অর্থাৎ ভারি গ্রাফিক্সযুক্ত সফটওয়্যার ব্যবহার করার সময় ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেটের জন্য আউটপুটে তারতম্য হতে পারে। বেশি হার্জের ডিসপ্লেতে এগুলো বেশি স্মুদ আর ঝকঝকে দেখাবে।
এ ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে স্মার্টফোনের চার্জ। স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে বেশিরভাগ ফোনেই ৬০ হার্জ ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট ব্যবহার করা হয়। টেলিভিশন, কম্পিউটার ইত্যাদির ক্ষেত্রেও সচরাচর ৬০ হার্জ রিফ্রেশ রেটওয়ালা ডিসপ্লে থাকে। এ ফোনগুলো যে পরিমাণ চার্জ খরচ করে, ১২০ হার্জ রেটের ফোনে তার চেয়ে অনেকদ্রুত চার্জ শেষ হয়। কারণ উচ্চ মানের রিফ্রেশ রেটের জন্য স্মার্টফোনের প্রসেসরকে বেশি কমান্ড এক্সিকিউট করতে হয়। আর ১২০ হার্জ ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট দেওয়া হয় দামী, ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলোতেই।
১২০ হার্জ ডিসপ্লেকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য দরকার একটি ভালো মানের প্রসেসরও। সুতরাং ১২০ হার্জের চমক দেখিয়ে কোনো স্মার্টফোনে যদি কম ক্ষমতার প্রসেসর দেওয়া হয়, তাহলে সে ফোনের প্রসেসর কিছুতেই ডিসপ্লের সাথে সঙ্গতি রেখে কাজ করতে পারবে না। তার ফলে, আপনি ভালো ইউজার এক্সপেরিয়েন্স তো পাবেনই না বরং আপনার আমও যাবে, ছালাও যাবে।
সুতরাং স্মার্টফোন কেনার আগে ভাবুন, আপনার কি আদৌ উচ্চ হার্জে ডিসপ্লের ফোনের প্রয়োজন? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ৬০ বা ৯০ হার্জের ফোন দিয়েই দিব্যি কাজ চলে যায়। কারণ ডিসপ্লের এই দিকটির পাশাপাশি পিক্সেল ডেনসিটি, কনট্রাস্ট, হোয়াইট টেম্পারেচার, রেজল্যুশন ইত্যাদি পয়েন্টগুলোও মাথায় রাখা উচিত।
ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেটের মতোই আরেকটি বিষয় হচ্ছে টাচ রেসপন্স রেট (touch response rate) বা টাচ স্যাম্পল রেট (touch sample rate)। এটি দ্বারা বোঝায় ঠিক কত গতিতে আপনার দেওয়া টাচ ইনপুটকে রেজিস্টার করে তার আউটপুট দিতে পারে আপনার স্মার্টফোন।
অর্থাৎ, আপনি একটা অ্যাপের ওপর ক্লিক করলে সেটি ওপেন করতে যতটুকু সময় লাগে তা-ই টাচ রেসপন্স রেট। আপনি টাচ করলেন, সে টাচের কমান্ড আপনার ফোনের প্রসেসরে গেল, প্রসেসর তার আউটপুট হিসেবে কমান্ড এক্সিকিউট করে অ্যাপটি আপনার সামনে ওপনে করে দিল। আর এ কাজটি করতে যতটুকু সময় লাগলো, তা-ই হচ্ছে টাচ রেসপন্স রেট।
প্রতিযোগিতামূলক গেমিং-এর জন্য টাচ রেসপন্স রেট ও ডিসপ্লে রিফ্রেশ রেট গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। কিন্তু সর্বোচ্চ হার্জের ফোন থাকলেই যে আপনি সেরা গেমার হয়ে উঠবেন তাও কিন্তু নয়। আপনার নেটওয়ার্ক কানেকশন ধীরগতির হলে রিফ্রেশ রেট কোনো কাজে আসবে না। অথবা কম ক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেসর, কম র্যাম ইত্যাদি কারণও গেমিং এক্সপেরিয়েন্সের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, গেমগুলোর অ্যানিমেশন কি ১২০ হার্জের রিফ্রেশ রেটে চলার জন্য অপ্টিমাইজ করে বানানো হয়েছে? আপনার প্রশ্নের উত্তর হলো, হ্যাঁ। রিয়াল রেসিং থ্রি, টেম্পল রান ২, মাইনক্রাফট আর্থ, ইঞ্জাস্টিস ২ ইত্যাদি জনপ্রিয় গেমগুলোর গ্রাফিক্স, ও অ্যানিমেশনকে ১২০ হার্জের রিফ্রেশ রেটের সাথে তাল মিলিয়ে চলার মতো করেই বানানো হয়েছে। সুতরাং, ১২০ হার্জের ফোনে এ গেমগুলোর সর্বোচ্চ অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে।
ধন্যবাদ ভাই। এত সুন্দরভাবে বোঝানোর জন্য।